ঢাকা,মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪

অনিয়ম দুর্নীতির আখড়া বিআরটিএ অফিস

নিউজ ডেস্ক ::
কক্সবাজার বিআরটিএ অফিস চরম অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। সরকারি জনগুরুত্বপূর্ন অফিসে সাধারণ মানুষ সেবা নিতে এসে সরকার নির্ধারিত ফির বিপরীতে আরো বিপুল টাকা উৎকোচ হিসাবে দিতে হচ্ছে। বাড়তি টাকা না দিলে কাজ হচ্ছে না সাধারণ মানুষের। আর এসব কাজ করে দেওয়ার জন্য বিআরটিএ অফিসে রয়েছে বেশ কয়েক জন দালাল। যারা উক্ত অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের হয়ে কাজ করে। আর কোন ভাবে কোন ব্যক্তি অফিস আসলেও তার হয়রানীর অন্ত থাকে না। ভোক্তভোগীদের দাবী বিআরটিএ অফিস অনিয়ম দুর্নীতি দীর্ঘদিনের, তবে সম্প্রতি তা আরো বেড়েছে এতে সাধারণ মানুষ ব্যাপক হয়রানির স্বীকার হচ্ছে। দ্রুত এ সব বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।
কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা বাংলাবাজার এলাকার সিএনজি মালিক হাবিবুর রহমান জানান, আমি ধারদেনা করে একটি সিএনজি কিস্তিতে নিয়ে নিজে চালিয়ে কোন মতে সংসার চালাই। সম্প্রতি আমার সিএনজির লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হলে গত সপ্তাহে আমি লাইসেন্স নবায়ন করতে কক্সবাজার বিআরটিএ অফিসে গেলে সেখানকার কর্মচারী মোহাম্মদ সাবের আমাকে একজন লোকের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে উনার সাথে সব কথা ও লেনদেন সেরে ফেলেন। সেই লোক আমাকে বলে লাইসেন্স নবায়ন করতে সর্বমোট সাড়ে ১২ হাজার টাকা লাগবে। আমি এর আগের বছর করেছিলাম ৯ হাজার টাকা দিয়ে এখন কেন সাড়ে ১২ হাজার জানতে চাইলে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে বাকঝকা করেন। এবং পরে বাধ্য হয়ে চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিয়ে কাজ করতে হয়েছে। পরে অফিসে গিয়ে জানা গেছে একটি সিএনজি লাইসেন্স নবায়ন করতে সরকারি ফি হচ্ছে টেক্স টোকেন ২,৬৯৭ টাকা, ফিটনেস ১,০৮৭ টাকা আইটি ৩,০০০ টাকা, এবং রোট পারমিট বাবদ ১,১০৪ টাকা সর্বমোট ৭,৮৮৮ টাকা সেখানে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ১২ হাজার টাকার বেশি। এনজিও কর্মকর্তা শওকত আলম বলেন আমি ও ৩ দিন আগে নিজের ব্যবহৃত মটর সাইকেলের লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়েছি সেখানেও বিআরটিএ অফিস আমার কাছ থেকে অতিরিক্ত ২হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছে। আমি ব্যাংকে জমা দিয়েছি ১৩ হাজার ৭৩ টাকা পরে সেখানকার কর্মচারীরা অনেকটা জোর করে আমার কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা বেশি নিয়েছে। তিনি বলেন বিআরটিএ অফিসে টাকা ছাড়া কোন করা খুব মুশকিল, এখানে কোন মানুষ সঠিক ভাবে তাদের নাগরিক অধিকার আদায় করতে পারে না। সবাইকে অতিরিক্ত ঘুষ দিয়ে কাজ আদায় করতে হয়। টাকা না দিলে মাসের পর মাস হয়রানী করা হয়। খুরুশকুল ইউনিয়নের আবদুল মালেক বলেন বিআরটিএ অফিসের অনিয়ম দূর্নীতির কথা বললে অনেক সময় ধরে বলতে পারবো। আগে একটি সিএনজি নুতন লাইসেন্স করতে ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা দিলে হতো এখন ৩২ হাজার টাকা লাগে ত্ওা লাইসেন্স পাওয়া যাচ্ছে না, শুধু আবেদন করেছি এরকম ডকুমেন্ট দেবে। এখানে ব্যাংকে যে টাকা জমা দিতে হয় তারা সেটা থেকে ৬/৭ হাজার টাকা বেশি নেয়। এখানে দালাল ছাড়া কোন কাজ হয় না, সেখানে অফিসে কর্মরত সবার বাইরে ব্যক্তিগত দালাল আছে তারা প্রকাশ্য সেই সব দালাল দিয়ে লেনদেন করে।
১৯ জুলাই কক্সবাজার বিআরটিএ অফিসের বাইরে দাড়নো রামুর সুমন বড়–য়া নামের এক ভোক্তভোগী জানান আমি এক প্রতিবেশির কাছ থেকে একটি সিএনজি কিনে নিতে চাইছি সে জন্য মালিকানা পরিবর্তন করতে বিআরটিএ অফিসে এসেছি সেখানে গিয়ে সাজেদুল করিম নামের কর্মকর্তার সাথে আলাপ করতে চাইলে তিনি আমার সাথে কোন কথায় বলতে রাজি হয় নি। তিনি পাশের আরেক কর্মচারীকে দেখিয়ে দিলে তিনি আমাকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র থাকার পর সরকারি ফি বাদে অফিস খরচ হিসাবে ৩ হাজার টাকা দাবী করেন, আমি ২ হাজার টাকা দিতে রাজি হলেও তারা কাজ করতে রাজি নয়, ৩ হাজার টাকাই নাকি দিতে হবে। তিনি বলেন একটি সরকারি অফিসে কিভাবে প্রকাশ্য টাকার লেনদেন করে বুঝতে পারি না। আমার মতে কোন দালাল নয় কর্মচারীরা নিজেরা টাকা নিচ্ছে এবং আমার হাত থেকে সাবের নামের লোক টাকা নিয়েছে। এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বিআরটিএ অফিসে নুরুল ইসলাম(একজন ডাক্তারের গাড়ী চালক) রহমান, এহসান, রমজান প্রকাশ্য সাধারণ মানুষজনের কাছ থেকে বিআরটিএ অফিসে কাজ করার জন্য টাকা লেনদেন করছে। অর্থাৎ এরা অফিসের কর্মচারীদের পক্ষে দালাল হিসাবে কাজ করছে।
শ্রমিক নেতা রাশেদুল ইসলাম বলেন কক্সবাজার বিআরটিএ অফিস একটি অনিয়ম দূর্নীতি আখড়া, এখানে টাকা ছাড়া কোন কাজই হয় না। এদের সাথে চুক্তি করলে গাড়ী চালাতে না জানলেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া যায় আর চুক্তি না থাকলে যত ভাল চালাক না কেন কোন সমস্যা দেখিয়ে বাতিল করে দেয়। এমনি অনেক ফাইল গায়েব হয়ে গেছে এই অফিসে সেগুলো আবার টাকা দিয়ে বের করতে হয়েছে।তিনি বলেন সম্প্রতি কক্সবাজার অফিস থেকে বদলী হওয়া এক কর্মচারীর আলিসান চলাফেরা দেখে আমরা অবাক হতাম তিনি বিকালের নাস্তা করতেন সীগাল হোটেলে , সেই ব্যক্তি শহরে অনেক জমি জমার নাকি মালিক।
টেকনাফ উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ফরহাদ বলেন কিছুদিন আগে আমি ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য পরীক্ষা দিতে গিয়ে অবাক কারন আমি অনেক প্রস্তুতি নিয়ে রীতিমত বই কিনে পড়ে অনেক কিছু লিখে পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছি। আর আমার বেশ কয়েক জন পরিচিত যারা কোন লেখাপড়াও জানে না, এমন কি গাড়ীও ঠিকমত চালাতে জানে না তারাও দেখলাম পাস করেছে। আমি অবাক হয়ে এক কর্মকর্তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এটা কিভাবে সম্ভব, প্রতি উত্তরে তিনি আমাকে বলেছিলেন আপনি যে পাস করেছেন সেটাই যথেস্ট বাকি গুলো মাথাঘামানোর দরকার নেই। তখন বুঝলাম এখানে সব কিছু সম্ভব।
এ ব্যাপারে কক্সবাজার বিআরটিএ অফিসের সহকারী পরিচালক জামাল উদ্দিন বলেন আমি নতুন এসেছি চেস্টা করছি সব কিছু নিয়ন্ত্রনে আনতে, তবে আগের বেশ কিছু সমস্যা এখানে লেগে আছে সেগুলো সমাধান করতে হলে একটু সময় দিতে হবে। আর বাইরে বিআরটিএ অফিসের নাম দিয়ে কেউ টাকা দাবী করলে আমাকে জানাতে অনুরোধ করছি। আর কোন দালাল এই অফিসে থাকবে না বলে জানান তিনি।

পাঠকের মতামত: